শুভ জন্মদিনের বিনম্র প্রণাম গুরুদেব
-রীণা চ্যাটার্জী
শ্রদ্ধেয় কবিগুরু,
শুভ জন্মদিন, গুরুদেব আপনার জন্মক্ষণ আমাদের কাছে শুধু গর্বের নয়, বিশাল প্রাপ্তির। আপনার অজস্র রচনা সম্ভারের প্রাপ্তির পরিপূর্ণতায় কৃতজ্ঞ আমরা জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আমাদের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই,প্রতি ক্ষণের অনুভূতি আপনার লিপিমালা। জনমে-মরণে, সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায়, ভালোবাসায়-বিরহে সকল আবহে আপনার অজস্র লিপি, প্রকাশ পায় আমাদের অভিব্যক্তি নির্দ্বিধায়। জনমের আহ্বান, মরণের মুক্তি,সুখের শান্তি,দুখের শ্রান্তি, বেদনার ভার, হাসির ঝংকার, ভালোবাসার উদ্বেলতা, বিরহের ক্লান্তি, সবখানেই আপনার লিপি আমাদের বুলি- আমাদের আত্মার আত্মীয়। ঋতু বরণ, প্রকৃতির অনুধাবন, প্রভাতী সূর্য, নিশির শশী সব আপনার লেখায় জীবন্ত। আমরা নিজের মতো ভাবতে বসলেও মনে এসে যায় আপনার লিখে যাওয়া সুর ছন্দ , মনে হয় আমাদের/আমার বলা, অনুভব, প্রকাশ ঠিক হলো না, আপনি যে অনেক মূর্ত করে বলে গেছেন-ছবির মতো গেঁথে আছে আমাদের চেতনায়। প্রভাতী গুনগুনে, ব্যস্ত ক্ষণে, ক্লান্ত মনে, নিশির নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী আপনার গান, আপনার ছন্দ।
আপনার বিদ্রোহ ধ্বনি, মৈত্রী বাণী, পূজার নিবেদন, জীবন দর্শন সব সব অনন্য প্রকাশ, অনন্ত অনুভূতি। বীজমন্ত্র হয়ে বিরাজিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আজ শতাধিক বর্ষ পার করে এসেও। আপনার রচিত সাহিত্য সৌধের অনায়াস গঠন আমাদের পরিপূর্ণতায় ভরিয়ে রেখেছে।আজো জ্ঞানে-অজ্ঞানে, চেতনে-অচেতনে আমরা আপনার স্মরণে, আপনার গঠনে। আফশোষ একটাই আপনার রচিত সাহিত্য সৌধের প্রতিটি অলিন্দে উঁকি দেওয়াও আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে প্রায় অসম্ভব।
পূজা,প্রেম একাকার হয়ে গেছে আপনার লেখায়,অনন্য সেই অনুভূতি আমাদের কাছে। সেই কোন ছোটবেলায় আমরা যখন আপনাকে না জেনেই আপনার বুলিতেই মাকে বলতে চেয়েছি,’মাগো আমায় ছুটি দিতে বল, সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা’ কখনো বা ছোট শিশুর বড়ো হতে চাওয়া আপনার হাত ধরে, ‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।’ কিছুটা পরে কৈশোরে আপনাকে কিছু জানার ফাঁকে কিছু সুরের হাত ধরা “সখী ভাবনা কাহারে বলে,সখী যাতনা কাহারে বলে’,’ ভালোবাসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’, ‘আমি তোমার প্রেমে হবো সবার কলঙ্কভাগী’, …. গানের মূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়া। আরো কিছু পরে মন চিনলো আপনাকে আরো গভীরে (?)’সোনার পিঞ্জর ভাঙিয়ে আমার, প্রাণের পাখীটি উড়িয়া যাক’, ‘এ কী হর্ষ হেরি কাননে।প্রাণ আকুল,স্বপন বিকশিত মোহমদিরাময় নয়নে।’, ‘কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া,’। সময়ের সরণী বেয়ে নতুন উপলব্ধি আপনার লেখায়, ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও,’ ‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা প্রভু, তোমার পানে তোমার পানে,’ সব অনুভূতি সব স্মৃতি আপনার দেওয়া। আর একটা বড়ো দুঃসাহসী দুরাশা আছে মনে, পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবার পর কেউ আমার ছবির সামনে যদি বলে,’তুমি কি কেবলি ছবি, শুধু পটে লিখা,’ ওই ডাকে বোধহয় আবার ফিরে আসবো এইখানে…. ভীষণ আকুতি যে ছাত্র ছত্রে। এই আকুলতা আমাদের সঙ্গী নিভৃত শেষ বেলার।
আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আপনার লেখনী নিয়ে জানাই আপনাকে সশ্রদ্ধ বিনম্র প্রণাম,
“এই গীতিপথপ্রান্তে হে মানব তোমার মন্দিরে
দিনান্তে এসেছি আমি নিশীথের নৈঃশব্দের তীরে,
আরতি সান্ধ্যক্ষণে, একের চরণে রাখিলাম
বিচিত্রের নর্মবাঁশি,এই মোর রহিল প্রণাম।”
অনবদ্য শ্রদ্ধার্ঘ্য
ধন্যবাদ
অনন্য শ্রদ্ধাঞ্জলী, সুনিপুণ লেখনীর গুণে,
হিল্লোলিত দোলা দিয়ে গেল পাঠক মনে ;
সশ্রদ্ধ আবেগী চিত্তে সদা কবিগুরুরে স্মরি,
বিনয়াবনত মননে বানী তব হৃদিপদ্মে ধরি ।
…খুব ভালো হয়েছে দিদি(রীণা চ্যাটার্জি, admin – আলাপী মন), অনবদ্য বাঙ্ময় লেখাটি কলমের গুণে মন ছুঁয়ে গেল, তার জন্য অশেষ সাধুবাদ জানাই , ধন্যবাদ সতত ।
ধন্যবাদ ভাই